পৃথিবীতে যত পদার্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে শক্ত নাকি হীরা। দামটাও তার সে রকম। অবশ্য শুধু অর্থমূল্যই নয়, হীরার গায়ে লেগে আছে সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের অন্য রকম ছোঁয়া। তার সঙ্গে ইদানীং আবার যোগ হয়েছে হাল ফ্যাশনের তকমা। তাই যারা একটু ফ্যাশন-সচেতন, একটু শৌখিন, হীরার জয়জয়কার তাদের মুখে মুখে ঘুরছে।
স্বাভাবিকভাবেই তরুণ প্রজন্মের কাছে হীরার কদরটা অন্য রকম। সে কথাটাই বললেন বসুন্ধরা সিটিতে গয়না কিনতে আসা সালমা আফরোজ, ‘আমার বয়সী যারা, মানে যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবে পাস করে বেরোল, গয়না কেনার ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দটাই থাকে ডায়মন্ড। আমার কানের দুলজোড়া সেই ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে কেনা, দুলটা অবশ্য রুপার, কিন্তু দুটোতেই ছোট ছোট চারটা হীরা বসানো আছে। সেই জন্য এর কদরটা সোনার দুলের চেয়েও বেশি।’
সালমার সঙ্গে ছিলেন মা দিলারা আলম, তিনিও সায় দিলেন মেয়ের কথায়, ‘আমাদের সময় যেমন সোনার গয়নার জন্য মেয়েরা পাগল ছিল, এখন দেখি আমার দুই মেয়েই হীরার দুল পরে। ছোটটা পাতলা একটা চেনের সঙ্গে ছোট ছোট হীরা বসানো লকেটও পরে। আর ওর জন্য আজকে এ রকম একটা কিনতে এলাম।’
গুলশান আড়ংয়ের গয়নার কাউন্টারের সামনে দেখা হয়ে গেল ইফফাত শারমিনের সঙ্গে। এই তরুণীও বললেন হীরার গয়নার প্রতি তাঁর আকর্ষণের কথা, ‘এখন ভারী গয়নার চেয়ে হালকা গয়না পরাটাই বেশি ফ্যাশনেবল। তাই নোজ পিন, ব্রেসলেট, আংটি—এগুলো ছোটখাটো হলেই বেশি ভালো হয়। কিন্তু একেবারে সিম্পল হলেও দেখতে যাতে একটু অন্য রকম লাগে, সে জন্য তাতে একটা মোটামুটি আকারের হীরা থাকলে ভালো দেখায়।’
তরুণ প্রজন্মের হীরার গয়নার প্রতি এই ঝোঁকটা বাড়ার কারণেই কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে নগরে বেশ কিছু গয়নার দোকান তৈরি হয়ে গেছে। গুলশান-২ নম্বরের পিংক সিটির চতুর্থ তলার এক প্রান্তে অবস্থিত ফিওর সে রকমই একটা দোকান। ফিওরের সংগ্রহে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নকশা আর দৃষ্টিনন্দন শৈলীর হীরার গয়না। এখানকার সেলস এক্সিকিউটিভ দীপক কর্মকার বললেন, ‘টিন এজারদের ডায়মন্ড অরনামেন্টসের প্রতি আগ্রহটা বেশি। তার কারণ, এগুলো হালকা হয়, কিন্তু এর উজ্জ্বলতাটা অন্য রকম। ছোট হলেও হীরার আভিজাত্যটা অন্য রকম। তা ছাড়া হাল ফ্যাশনের সঙ্গে একেবারে খাপে খাপ মিলে যায়।’
শুধু মেয়েদের কথা বললে কিন্তু ভুল হবে। আজকালকার ছেলেরাও হীরার আংটি, লকেট কিংবা কানের দুল পরতে আগ্রহী। পিংক সিটির চতুর্থ তলারই আরেকটি দোকান জেমস ওয়ার্ল্ডে হীরার আংটি কিনতে এসেছিলেন ব্রায়ান। এত কিছু থাকতে হীরার গয়না কেন, জানতে চাইলে তিনি জবাব দিলেন, ‘তিনটা কারণ—প্রথমত, এটি সহজে নষ্ট হয় না; দ্বিতীয়ত, খাঁটি হীরার রিসেল ভ্যালু সব সময়ই ভালো; তৃতীয়ত, ঠকার আশঙ্কা কম।’ জেমস ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপক সোহাগ জানালেন, ছেলেরাও আজকাল হীরার ব্রেসলেট কিংবা আংটি, লকেট পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
তবে শুধু তরুণ প্রজন্ম কিংবা উচ্চবিত্ত নয়, হীরার গয়নাকে আরও বেশি সহজলভ্য করার একটা চেষ্টাও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর। গুলশান এভিনিউয়ের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কো-অর্ডিনেটর আশফাকুল হাসান বললেন সে রকমটাই, ‘আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে হীরার গয়নাটাকে সব মানুষের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা। শুধু যেন উচ্চবিত্তের জন্য না হয়, শুধু যেন অভিজাত মানুষের মধ্যে আটকে না থাকে। তাই আমরা ছোট হীরার গয়নাটা বেশি রাখি। কেননা, ক্রেতাদেরও আগ্রহটা একটু কম দামের গয়নার দিকেই বেশি। তা ছাড়া আমরা মনে করি, যে পরিমাণ টাকা লাগে একটা সোনার গয়নায়, তার চেয়ে অনেক কমে হীরার গয়না পাওয়া সম্ভব।’
কিন্তু কেনার সময় সাধারণ লোকে বুঝবে কী করে, কোনটা খাঁটি হীরা কিংবা এর দাম কত? সে কথার জবাবে ফিওরের দীপক কর্মকার বললেন, ‘চারটা জিনিসের ওপর হীরার দাম ওঠানামা করে। আমরা বলি চারটা সি। প্রথমত, কাট। হীরার কয়েক রকমের কাট আছে। এর মধ্যে ব্রিলিয়ান্ট কাট বা বেলজিয়াম কাট হলে দাম বেশি হবে। দ্বিতীয়ত, ক্ল্যারিটি। অর্থাৎ, হীরা যত স্বচ্ছ হবে, তার দাম তত বেশি হবে। তৃতীয়ত, কালার বা রং। হীরার রঙের ওপর এর দাম ওঠানামা করে। রং যত সাদা, দামও ততটা বেশি। চতুর্থত, ক্যারেট বা ওজন। ক্যারেট যত বাড়বে, দামও তত বাড়বে। আর খাঁটি হীরা চেনাটা এখন আর খুব কঠিন কিছু নয়। ডায়মন্ড টেস্টার মেশিন জুয়েলারিগুলোতে থাকে। সেটা দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া যায়। আর আমরা বিক্রি করার সময় ক্রেতা চাইলে এর সার্টিফিকেট এবং নিশ্চয়তা দিতে পারি।’
No comments:
Post a Comment